রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
নন্দীগ্রাম (বগুড়া),প্রতিনিধি, কালের খবর : নন্দীগ্রাম উপজেলার গ্রামীণ প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প নানা সংকটে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, কারিগরির মজুরি বৃদ্ধি, তৈরি সামগ্রী বিক্রয়ের মূল্য কম, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্টিল সামগ্রী আমদানিসহ চরম আর্থিক সংকট ও উৎপাদনের চাহিদা কম থাকায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে নন্দীগ্রাম উপজেলার কামার শিল্প বিলুপ্তির পথে। মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হাটবাজারে কামার পল্লীতে দেশি প্রযুক্তির দা-কুড়াল, বেঁকি, খুনতা ও কাটারি বানাতে বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কামাররা।
এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই গ্রামের লোকজন গরু, মহিষ, ছাগল জবাই ও মাংস তৈরির কাজের জন্য খামারিদের কাছে প্রয়োজনীয় ধারালো দেশি তৈরি চাকু, বঁটি, কাটারি ও ছুরি তৈরিতে আগাম ওয়ার্ডার দেয়া শুরু করায় কামার পল্লী ও হাট -বাজারগুলোতে হাতুড়ির টং টং শব্দে এখন মুখরিত। ঘুমাতে পারছে না কামার বাড়ির আশপাশের বাড়ির মানুষগুলো। আধুনিকতার উৎকর্ষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নানাবিধ সমস্যার কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার হাজার গ্রাম বাংলার মানুষের প্রিয় এই কামার শিল্পটি।
এক সময় নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকার পরিবার থাকলেও তাদের তৈরি পণ্য সামগ্রী প্রযুক্তির ছোঁয়ার কাছে টিকে থাকতে না পারায় বেশকিছু পরিবার তাদের পৈতৃক পেশা ধরে রাখতে না পারছে বাঁচতে, না পারছে বাঁচাতে। কিছুটা বাধ্য হয়েই পরিবারের অভাব অনটন ও চাহিদার তাগিতে লাভ জনক পেশায় চলে যাচ্ছে। নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবাঘা, ওমরপুর, বুড়ইল, ধুন্দার, হাটকড়ই, বিজরুল বিভিন্ন গ্রামের ৫০টি পরিবারের কর্মকারেরা তাদের পৈতৃক পেশা অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে হলেও দু’-মুঠো ভাতের আশায় তারা এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যতটুকু লাভ হোকনা কেন কোনোরকম দিন চললেই তারা খুশি। অন্য পেশায় যেতে তারা নারাজ। নন্দীগ্রাম বাজার, হাটকড়ই, রণবাঘা, ওমরপুর, ধুন্দার, পণ্ডিতপুকুর, বিজরুল সহ প্রতিটি হাটবাজারে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কামারপাড়ার কারিগররা সারা বছর অলস সময় কাটালেও বর্তমানে ঈদের কারণে রাত-দিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
এখনকার কামাররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি বঁটি, কুঠার, খুন্তা সহ বিভিন্ন ধরনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় লৌহজাত দ্রব্য তৈরি করেন। নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবাঘা গ্রামের শ্রী বিশ্বনাথ কর্মকার জানান, একটি মাঝারি ধরনের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে যে কয়টা জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থে এই পেশা ধরে রেখেছি। রনবাঘা বাজারের মহাদেব ও সহদেব কর্মকার জানান, আমার বাপ দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তারা গত হওয়ার পর ঐ সূত্র ধরে আমার জীবনের শেষ মুহূর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি। অন্য কোনো পেশায় যাব সেই আর্থিক সঙ্গতি নেই। তবে সরকার আমাদের বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতা ও সুদবিহীন ঋণ প্রদান করলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুরে দাঁড়াবে।